Wednesday, November 16

অপসৃতি

স্পষ্ট কোনো আকৃতি গড়ে ওঠেনি তখনো
অন্ধকারের শৈশবজুড়ে শিল্পের ধ্যান
নক্ষত্র রাত্রির অনুষঙ্গ আর চাঁদ দ্যুতিময়
যখন মলিন,
স্বাতী নক্ষত্র—মৃতপ্রায়,
উপমার খোঁজে কালো বেড়াল
আকৃতি নিচ্ছে জন্মের।
প্রবণতা ভবিষ্যতের পথেই হাঁটে;
বস্তুত, সময়ের সাথে তার সম্পর্ক অচেনা।

ঘড়ির ভেতরে দিন রাত
সন্ধ্যার মৃদু নিশ্বাস জন্মান্তরকাল
এইখানে জড়িয়ে গেছে যেন
অদ্ভুত রাত্রির সঙ্গে অদ্ভুত রাত্রির প্রণয়।


মীমাংসিত মৃত্যুর বিকল্প হও!
দেখ, আমাদের সন্ততিরা কাঁদছে।
আর, একটা ট্রেন
ছুটন্ত রয়েছে—আমাদের থেকে দূর থেকে দূরে
দূরে, দূরে ধাবমান।

Wednesday, November 2

সিমিলি


স্বরগত বিভূতি তোমার, আমি স্থির নৈঃশব্দ্য
এই মন্দির টেরাকোটা নামহীন নির্মাণ
তোমার শর কৃপাণ বুকে বিঁধে আছে।
জড়োসড়ো সূর্যের দিনে আমি প্রলম্বিত লয়
স্থিরচিত্র নয়
শরীরমগ্ন চৈতন্যের ছায়া।
মেঘ ও পারাবত যুগপৎ ভেসে যায়
সোনালি আকাশে;
আমি স্রোতচিহ্ন
রুপালি জলে ফেনায়িত শাদা।
তুমি রথ নিয়ে ছুটেছ স্বপ্নমৃগয়ায়;
তূণীর ছেঁড়া বিভঙ্গে
ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়েছ হৃদয়।
বিবিধ দিন শোকচিহ্নগুলোর ওঠানামা, ঋতুর পর্যায়ক্রম
তোমাকে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাওয়া অনিকেত জোছনায়।
মোহরের মতো উজ্জ্বল ঝরে যায় প্রান্তর সমুদ্র চন্দ্র মন্দির।
আমার নিবাস যে আকাশে তার গায়ে গায়ে নির্লিপ্তি নেমে আসে
যেন সেমেটারি থেকে ফিরে ক্লান্ত; বিকেলজুড়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে কন্যা।

Friday, October 28

আলাপ


নৈকট্যহেতু আমি দেখেছি—নবীনা, যেহেতু আগে দেখি নাই
আমাদের ভাষাহীন সংযোগের ভিতর ক্রমে বিচ্ছেদের
সম্ভাবনা লুকানোই ছিল, কৌতুকতার ভিতর,
তোমার আমার সমীপবর্তিতা, ফেরানো সলাজ হাসি
বহুদূর যায়...

সেই যৌথচিন্তার ভাষা ছিল না কোনো, একসঙ্গে
ধারণাগুলো ভেবে নিচ্ছিলাম আমরা:
তোমার অভিব্যক্ত মুখরেখায়, তোমার নীরবতার ভেতর
অনুচ্চারিত কথাগুলো যেন বেশি জরুরি—জরুরি, কিন্তু বিপর্যস্ত।
হারিয়েই তো যাচ্ছে সে সব...

মনে হয়, এরকমই ঘটে। তোমারও কি মনে হয় না,
সন্ধ্যার খানিক ফুল, ফুলের মতোই তাকিয়ে থেকে ঝরে যায়?

Monday, August 15

যেখানে, নেই


এক একটা দিন রাস্তাগুলো বহু দূরে চলে যায়, সময়ের সাথে দূরত্ব সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্থহীন মনে হয় যেহেতু রাস্তা ক্রমশ আরো আরো রাস্তার দিকেই যায় অন্ধকার ও আলোর দ্ব্যর্থহীন বিরোধের কথা মনে রেখে

হেঁটে যেতে যেতে আমি রাত্রির নিরপেক্ষতার কথা ভাবি, তার সহনশীল শীতল আচরণ আমাকে কতটা ব্যথিত করে এইরকম সময়ে, যখন আর কিছু নিয়েই ভাবছি না, পায়ের পর পা পড়ছে রাস্তায় আর দূরত্ব ক্রমে দূরে দূরে সরে যাচ্ছে, কিংবা যখন এ-বছরকার ফেব্রুয়ারি শেষে ক্ষণকালীন বসন্ত যেভাবে আসলো এবং চলেও গেল, তার বাতাসের ধূলিমুখর সংবেগ কোথায় ফেলে রেখে, তার খোঁজ রাখা হলো না

আমি অনুভব করি স্থিতির অপর্যাপ্ত কাল অথবা সময়হীনতার দীর্ঘ সেতু পেরিয়ে মুহূর্তের যে সম্ভাবনা রচিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমি তার কিছুই স্পর্শ করতে পারি না, শুধু মনে হয় সকল রাস্তা-ই বহূ দূরে দূরে চলে যায় সম্প্রসারণশীল শূন্যতার মতো দূরবর্তী নক্ষত্রের রাতে, আমি যার বহু পেছনে পড়ে থাকি; নিত্য-অতীতে আমি যেন রক্তমাংসের গতকাল

Monday, August 8

ভাসমান


স্মৃতি নিয়ে কারা ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে যায়
রাত্রির গভীর, সকাল থেকে বিকেল অবধি
উন্মীলিত ধোঁয়ায় ঘনিয়ে ওঠা বিস্মৃতির গহন থেকে
উঠে আসে এক একটা দিন।
কারা যায়, কারা আসে, 
কারা থেকে যায়...
কেবলই ধোঁয়া জমে আসে
সম্মুখ দৃশ্যাবলির ভিতর
আরো দূর ভাসমান বৃন্তচ্যূত জলজের মতো
আরো দূরপ্রবাহী অপেক্ষার ভরসার মতো 
কারা চলে যায়, যে যার মতো একা?

Sunday, July 24

রাতের অন্তর্লীনে

দীর্ঘ রাত্রিটির শরীর তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে আরো স্থায়ী আঁধারে
যেখানে মরালির একটিমাত্র পালক জলের কিনারে সকাল, টলমল।
অমানিশার শেষ ঘণ্টাধ্বনি থেমেছে কোথাও— এই স্থবিরতা কতকাল
দেখেছি একা। কখনো ভাবিনি এও এক ভাষা তার, তোমাকে জানাবার, এইসব সত্য
নীরবে বলা হয়ে গ্যাছে—সমস্ত শীতরাত্রির শেষে যেমন হিম থেকেই যায়; যত
আলোকিত হও—নগ্নতার নিরপেক্ষ বিভাব, যতো নির্জনে যাও—কোলাহল থেকে দূরে
তার চেয়েও গভীরে সন্তরিত মনের বিষাদ—একবার ছুঁয়ে দ্যাখো যদি পারো!
অস্পৃশ্য যা নয়, যা-কিছু মমতায় জেনেছো, স্নিগ্ধ হয়ে আছে বরফশীতল।
এই দেহ বহুকাল সময়ের ভেদচিহ্ন ভুলে বিরহে লীন হয়নি এখনও;
দূরত্ব, ভালোবাসে অন্ধকার। বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ে। আমি রোদের আঁচে
উজ্জ্বলতর কোনো আগুনের কথা ভাবি—দিঘিতে আকাশ তবুও সবুজ পত্রালি
আর আমি জেনেছি রাত্রির মানে অনুপস্থিত সব রঙ আঁধারে মিশে থাকে একাকার।

Tuesday, June 14

ভাগশেষ

আমাকে লুকাতে পারো, ছায়াকে নয়
অবিনশ্বরতার মোহে ছায়ারা বেঁচে থাকে।

যা কিছু স্পর্শের অতীত, এই আলো, অন্ধকার
যা কিছু ছায়াদৃশ্যের জন্ম দেয়, চলমান ও নিশ্চল
সময় ও প্রতীকের বিরোধ
থেকে যায়;
যা থাকে না সেখানেই আমি থাকি পুরোপুরি।

গলন্ত শবের গায়ে রোদ পোড়ে;
সান্ধ্যহাওয়ায় দ্বিধামলিন স্মৃতিকাতরতা
ক্রমশ মুছে দেয় অনুভূতির বিষাদ
অথচ কী থেকে যায়
আমি আজো স্থির করতে পারি নি—
ছায়া না ছায়াশরীরের অভিক্ষেপ,
না কেবলই স্পর্শের অনুভূতি!

নাকি এমন কিছু, অক্ষর যার শরীর নির্মান করতে পারে নি;
বরং আভাস দিয়ে হারিয়ে গেছে
ইন্দ্রিয় যেরকম বিকলাঙ্গ শিশুর মতো সরল হাসে।

বাতাসে শিরশির শব্দ।

হ্যালোজেন বাতির বিচ্ছুরিত সবুজ আলোয়
আমি ও অন্য মানুষগুলো শুধু ছায়া নির্মান করে যাই—
অন্যত্র থেকে অন্যত্রে।

Sunday, April 24

মনে হয়, হয়ে ওঠার এই প্রবণতা
ব্যর্থতার চেয়েও গভীর বিষাদে পূর্ণ; বারবার ফিরে যাওয়া
যেন ঘরের কাছে
যেন ঘর বলে কিছু নেই, সময়ের সাথে
আমি দেখে নিচ্ছি সকল সম্পর্ক শেষ হয় একদিন
তবুও নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া
ভিন্ন কোনো মানুষের মতো

সজ্ঞার অবচেতনে আঘাত করে বারবার।
আমি তার কাছে ফিরে যাই প্রত্যাঘাতের তুমুল অন্বেষায়
যদি এইভাবেও কিছু থেকে যায়, আর
সত্য ও মিথ্যাগুলোর সীমারেখা অস্পষ্টতর হতে হতে
একীভূত হয়ে যায় কোনোদিন। কোনোদিন
প্রত্যাশী হয়ে থাকা নতজানু দরিদ্র দিনগুলো, বছর শেষে
কীভাবে পুনরাবৃত্ত হয়, বারবার, আবার।

Sunday, April 3

উদ্বাস্তু মানুষের প্রতি

সময় যেভাবে কেটে যায়, পার হয় এবং দূরবর্তী যে অনিশ্চয়তা
যা ছিল বা থাকবে না দৃশ্যান্তরের সেই ফাঁকটুকু
বোঝার ও না-বোঝার প্রয়োজন একইসাথে পূরণ করে
সেটিকে অস্বীকার করে চলো তুমি।

রাস্তা ও সমুদ্রের সীমানা বদলায়
জন্ম ও জন্মান্তরের প্রার্থনারা বেঁচে ওঠে বারবার
সঙ্গমরতার জরায়ুতে বেদনা
কাচের মতো স্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর
বাস্তবের ভেতরের আরেক বাস্তবের সংশয় কাটিয়ে
তুমুল হাসিতে ভেঙে দিচ্ছে এই নির্জনতা।

সমস্ত অনিশ্চয়তা নিয়ে তুমি স্থির থাকো।
স্থির থাকো।
স্থির থাকো পুরনো বাতিঘরের মতো।

Friday, March 11

উচ্চারণের আগে

বোবা দিনগুলি আসে, যায়
চলে যেতে আসে,
কিছু না বলে, কিছু না শুনে
যেতে হবে তাই চলে যায়


আমি এইসব নিয়ম বুঝি না


ব্যাখ্যাতীত অনুভূতিগুলো রক্তমাংশের গভীরে
নিশ্বাসের যে প্রেরণা
আমি ধারণ করে চলি তার মতো
সহজ।


এর কতটুকু মানুষের নিজের ভাষ্য আর কতটুকু ব্যর্থতা?

Thursday, January 20

সংশয়ে


ভেঙে যাচ্ছে ভেতরের প্রাচীন প্রাচীরসমূহ
হার্মাদ ঘোড়াদের পরিকল্পিত অগ্রসরতা
মাটি ও উপত্যকার বাতাসে
বিকেলের নিরপেক্ষ রোদ দেখে যাচ্ছে
আমার বিশ্বাস;
আমার স্বস্তি, সান্ত্বনা, আকাশ দেখার
টেলিস্কোপ আর আবশ্যিক অন্ধকার
মারা যাচ্ছে

আমাদের বিপন্ন ভেসে যাওয়া
যখন বুক ভার করে দাঁড়াবে,
কিছু প্রাচীন পাহাড়
বর্ষায় তুমুল বৃষ্টি
বৃষ্টিপরবর্তী নীল সমুদ্রতট;

ঘোড়া ও প্রাচীর, ভাঙন ও স্রোতের নিবিড় সম্পর্কে
তুমি অবিশ্বাস করে যেও
© তারেক রহিম. ২০১২. Powered by Blogger.
© Absurd Dreams
Designed by: Maira Gall