Monday, September 28

ইডিঅসি

আমারই স্বপ্নদৃশ্যে আততায়ী হয়ে তোমাদের আসা যাওয়া। অথচ তোমরা আর কোথাও নেই। এ শহরে নেই, এ পাড়ার রংদার মুদি দোকানের পসরায় নেই, দ্রুতগামী উড়ন্ত ফড়িং-এর ডানায় নেই, দূর্বায় অবিচল সকালের রৌদ্রে নেই। আমি যেমন করে চাই, শরীরি প্রেত, তুমি ছায়া হ’য়ো না। তোমার রক্তমাংসের ছোঁয়ায় আমি উদ্ভ্রান্ত নির্ঘুম রাত কাটাতে পারি, কেবল আমার স্বপ্নে এসো না। আমি ঘুমুতে চাই প্রবল শীতনিদ্রায় বয়সের অর্ধেকটা জুড়ে জীবনের সব দেখা পরিচিত দৃশ্যগুলোকে জীবন্ত দেখতে চাই না আর। রাস্তাগুলো বদলাচ্ছে না কিছুতেই, সার সার আলোবন্দী ঘর, মেঝে, ফুটপাত, বাজার বাজার মাংসের দোকানে ক্রেতার ভিড় সকাল থেকেই মুখরিত সময় চাই না। কতটা দীর্ঘ সময় পর জেগে উঠলে টের পাবো কতটা বদলে গেছে পরিচিত সবকিছু। কুয়াশায় ঢাকা ময়লা দুধের সরের মত আকাশ কতটা সীসা মেখে অপরিচিত হয়ে যাবে আরও... এবং তুমি দীর্ঘনিদ্রায় আমার স্বপ্নে অক্লান্ত আসা যাওয়ায় ক্লান্ত হয়ে একদিন তুমুল ঘুম উপহার দেবে আমাকে। আমি দেখবো সব মুছে গেছে, এ-মাথা ও-মাথা কোন চৌরাস্তা নেই রূপকথার দেশের মতো হালকা কুয়াশার আড়ালে মাটি ঢেকে যাবে, ঝাপসা বনভূমি দূরবর্তী অপরিচিত ফুল এবং খুব বেশি মানুষ দেখা যাবে না কোথাও, আমি কোন কুৎসিত মানুষ দেখতে চাইছি না, যখন আমার স্বনির্মিত অস্তিত্ব আগুনে পুড়ে যেতে যেতে কাঠকয়লার মতো জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হয়ে গেছে এবং তোমরা আলাদা সময়ের ভেতর হয়তো বালকের হাতের তর্জনি হয়ে যাবে; আমি কাঠকয়লার আগুনে নির্দেশিত, জ্বলজ্বল করতেই থাকবো আমৃত্যু গ্যাসোলিন; পোড়া ছাই কর্পূরের মতো নিঃশব্দে উড়ে যাবে। এবং এইসব ভুতুড়ে আসা যাওয়ার মাঝে রিকশার প্যাডেলে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে, আবর্তনশীল গ্রহের মতো বছর বছর ঘুরে যাবে অসংখ্য চাকা এবং যদি গন্তব্য বলে কোন স্থির লক্ষ্যে আমাদের প্রতীতি হয়, তো সেখানে পৌঁছে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে... কেন তা জানা হয় না আর...
আহ! আজ এই সকাল দশটায় আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।

দ্বিধা

না আঁকা অনেক স্কেচ, অনেক ইজেলে ছিটানো রঙ
চিন্তায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে
অনেক গোপনীয়তার মতো, দিনের শুরুতে
তোমায় যা বলা হয়নি, এখন এই মধ্যাহ্নের সূর্য
মেঘ ও মৃত্তিকার ঘ্রাণ
আমাকে সাহসী করে তোলে
কিংবা বেপরোয়া।
অথচ বাইরে ভীষণ রোদ্দুর
এবং
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না এই রোদে
অগত্যা ইচ্ছা ও অনিচ্ছার দোলনায়
তোমায় চড়িয়ে দিলাম...
এখন দেখি জানালায় মন্থর দিন কাঁপছে নির্বিকার।

প্রাত্যহিক

মনের মধ্যে এক অন্ত্যজ সংস্কার বেড়ে ওঠে
বেড়ে ওঠে রক্তের অনেক গভীরে
যেন সাপের বিষাক্ত শিহরণে
কেঁপে ওঠে জ্যোৎস্নাক্রান্ত রাত
আমার অভ্যাস, লোকচর্চা, নিভৃতি
আমার দিনানুদিন ছিন্নমূল     বাসনার শেষ বসন্তের হাওয়া

আমার নৈঃশব্দ্য নিজের অস্তিত্বের ভেতর চুপচাপ বেড়ে ওঠে
        যেন ভীষণ অচ্ছ্যুত!
পলায়নপর রোদ্রের ভিতর
এক টুকরো মেঘ যেমন জলের প্রাচীন ভার বয়ে বেড়ায়
আমি যেন একা নই, যেন নিজেই একটি গোষ্ঠী
যাযাবর রক্তের অভিশাপ বয়ে নিয়ে চলি
        শতাব্দীর পর শতাব্দীর পর...

আলতামিরার শিকারীপুরুষ
এখন প্রাত্যহিক বাজারের ফর্দ, নিরামিষ
কাঁধে মরা বাইসন, পেশীতে ঘোর কালশিটে

যার তুমুল বর্শার বাসনায় কাঁপে শেষ বসন্তের হাওয়া।

© তারেক রহিম. ২০১২. Powered by Blogger.
© Absurd Dreams
Designed by: Maira Gall