Friday, October 23

ক্রান্তি শেষবেলার...

... প্রদক্ষিণ করে যাবে নিজস্ব মৃত্যুময় পথ তোমার বলয়ে
গ্রহাণুপুঞ্জ আমাদের স্মৃতিতে যেরকম ছিল একদা
মেঘমন্দ্রিত ভোর প্রবল উচ্ছ্বাসে ভেসে বেড়াবে আষাঢ়ের প্রথম আকাশে
ঠিক যতটা ধূসর হলে তারে বিষণ্ণ বলা যায়...
এখনো নিয়মিত বৃষ্টি হয় এখানে; ভালোবেসে জল হয় মেঘ দুপুর রাতে।

সকাল

সকাল, তোমাকে অভিবাদন জানাই
তোমার জন্য খুব যে উদ্গ্রীব ছিলাম তা নয়, হয়তো নিরাসক্তি-ই ছিলো
তবু কী প্রতীক্ষা আমাদের অভ্যস্ততায় মিশে আছে দেখো---
মনে হলো--- তুমি একটি দীর্ঘ রাত পার করে এলে।
কতোটা দীর্ঘ তা জানা নেই; আমার ঘরে কোনো ঘড়ি ছিলো না।
মাঝে মাঝে সময়হীন থাকতে ভালো লাগে। নিজেকে ঈশ্বরের মতো মনে হয়
আর তখন সবই ঘটে আমার ইঙ্গিতে, চাইলে রাতও গন্তব্যে পৌঁছায়, ভোর হয়।
আপাতত পাখিদের শব্দ শুনছি। প্রতি সকালে তা শোনার সুযোগ হয় না
প্রতি সকালে মেঘের বিন্যাস ভিন্ন। প্রত্যেক ভোরে মানুষ অন্য মানুষ।

অহর্নিশ ফেরার

এইসব সন্ধ্যা, রাত্রি, অলসঘুমের পড়ন্ত বিকেল, এইসব মানুষ ও লোকায়ত সময়
মনে হয় সবই বিগত জন্মের স্মৃতি-- কোনো এক দূর্বোধ্য কারণে ফিরে ফিরে আসে।
হন্তারক শব্দের আড়ালে আড়ালে আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় অবিরত যেখানে
অসময়ের মেঘেরা বিরহ কুড়োয়, যেখানে প্রাচীন মাঠের উদ্বাস্তু ঘাস ধূলোতে বাতাসে অন্তর্লীন।
এইখানে পথের বিস্তারে গতরাজ্যের শ্লোক; নিদ্রিত অভিমান আজ হৃৎপিন্ডের আনাচে কানাচে
এবং
ঘুমকাতর নিশিবনের আর্দ্র সজারু যেন বৃষ্টিশেষের স্নিগ্ধতায় অনিবার কাঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে...

Monday, September 28

ইডিঅসি

আমারই স্বপ্নদৃশ্যে আততায়ী হয়ে তোমাদের আসা যাওয়া। অথচ তোমরা আর কোথাও নেই। এ শহরে নেই, এ পাড়ার রংদার মুদি দোকানের পসরায় নেই, দ্রুতগামী উড়ন্ত ফড়িং-এর ডানায় নেই, দূর্বায় অবিচল সকালের রৌদ্রে নেই। আমি যেমন করে চাই, শরীরি প্রেত, তুমি ছায়া হ’য়ো না। তোমার রক্তমাংসের ছোঁয়ায় আমি উদ্ভ্রান্ত নির্ঘুম রাত কাটাতে পারি, কেবল আমার স্বপ্নে এসো না। আমি ঘুমুতে চাই প্রবল শীতনিদ্রায় বয়সের অর্ধেকটা জুড়ে জীবনের সব দেখা পরিচিত দৃশ্যগুলোকে জীবন্ত দেখতে চাই না আর। রাস্তাগুলো বদলাচ্ছে না কিছুতেই, সার সার আলোবন্দী ঘর, মেঝে, ফুটপাত, বাজার বাজার মাংসের দোকানে ক্রেতার ভিড় সকাল থেকেই মুখরিত সময় চাই না। কতটা দীর্ঘ সময় পর জেগে উঠলে টের পাবো কতটা বদলে গেছে পরিচিত সবকিছু। কুয়াশায় ঢাকা ময়লা দুধের সরের মত আকাশ কতটা সীসা মেখে অপরিচিত হয়ে যাবে আরও... এবং তুমি দীর্ঘনিদ্রায় আমার স্বপ্নে অক্লান্ত আসা যাওয়ায় ক্লান্ত হয়ে একদিন তুমুল ঘুম উপহার দেবে আমাকে। আমি দেখবো সব মুছে গেছে, এ-মাথা ও-মাথা কোন চৌরাস্তা নেই রূপকথার দেশের মতো হালকা কুয়াশার আড়ালে মাটি ঢেকে যাবে, ঝাপসা বনভূমি দূরবর্তী অপরিচিত ফুল এবং খুব বেশি মানুষ দেখা যাবে না কোথাও, আমি কোন কুৎসিত মানুষ দেখতে চাইছি না, যখন আমার স্বনির্মিত অস্তিত্ব আগুনে পুড়ে যেতে যেতে কাঠকয়লার মতো জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হয়ে গেছে এবং তোমরা আলাদা সময়ের ভেতর হয়তো বালকের হাতের তর্জনি হয়ে যাবে; আমি কাঠকয়লার আগুনে নির্দেশিত, জ্বলজ্বল করতেই থাকবো আমৃত্যু গ্যাসোলিন; পোড়া ছাই কর্পূরের মতো নিঃশব্দে উড়ে যাবে। এবং এইসব ভুতুড়ে আসা যাওয়ার মাঝে রিকশার প্যাডেলে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে, আবর্তনশীল গ্রহের মতো বছর বছর ঘুরে যাবে অসংখ্য চাকা এবং যদি গন্তব্য বলে কোন স্থির লক্ষ্যে আমাদের প্রতীতি হয়, তো সেখানে পৌঁছে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে... কেন তা জানা হয় না আর...
আহ! আজ এই সকাল দশটায় আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।

দ্বিধা

না আঁকা অনেক স্কেচ, অনেক ইজেলে ছিটানো রঙ
চিন্তায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে
অনেক গোপনীয়তার মতো, দিনের শুরুতে
তোমায় যা বলা হয়নি, এখন এই মধ্যাহ্নের সূর্য
মেঘ ও মৃত্তিকার ঘ্রাণ
আমাকে সাহসী করে তোলে
কিংবা বেপরোয়া।
অথচ বাইরে ভীষণ রোদ্দুর
এবং
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না এই রোদে
অগত্যা ইচ্ছা ও অনিচ্ছার দোলনায়
তোমায় চড়িয়ে দিলাম...
এখন দেখি জানালায় মন্থর দিন কাঁপছে নির্বিকার।

প্রাত্যহিক

মনের মধ্যে এক অন্ত্যজ সংস্কার বেড়ে ওঠে
বেড়ে ওঠে রক্তের অনেক গভীরে
যেন সাপের বিষাক্ত শিহরণে
কেঁপে ওঠে জ্যোৎস্নাক্রান্ত রাত
আমার অভ্যাস, লোকচর্চা, নিভৃতি
আমার দিনানুদিন ছিন্নমূল     বাসনার শেষ বসন্তের হাওয়া

আমার নৈঃশব্দ্য নিজের অস্তিত্বের ভেতর চুপচাপ বেড়ে ওঠে
        যেন ভীষণ অচ্ছ্যুত!
পলায়নপর রোদ্রের ভিতর
এক টুকরো মেঘ যেমন জলের প্রাচীন ভার বয়ে বেড়ায়
আমি যেন একা নই, যেন নিজেই একটি গোষ্ঠী
যাযাবর রক্তের অভিশাপ বয়ে নিয়ে চলি
        শতাব্দীর পর শতাব্দীর পর...

আলতামিরার শিকারীপুরুষ
এখন প্রাত্যহিক বাজারের ফর্দ, নিরামিষ
কাঁধে মরা বাইসন, পেশীতে ঘোর কালশিটে

যার তুমুল বর্শার বাসনায় কাঁপে শেষ বসন্তের হাওয়া।

© তারেক রহিম. ২০১২. Powered by Blogger.
© Absurd Dreams
Designed by: Maira Gall